ইসলামে নাম রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন তোমাদের নিজ নিজ নাম ও তাদের পিতার নামে ডাকা হবে, তাই তোমরা সুন্দর নাম রাখো।” (সুনানে আবু দাউদ)। পবিত্র কুরআন এবং হাদিস থেকে অনুপ্রাণিত নামগুলো শিশুদের জন্য আশীর্বাদ ও সুন্দর অর্থ বহন করে। নিচে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে উৎসারিত ১০০টিরও বেশি মুসলিম ছেলেদের নামের তালিকা দেওয়া হলো, যার উৎস হিসেবে Quran.com ব্যবহৃত হয়েছে।

কুরআন থেকে নামের তালিকা
নিচের নামগুলো কুরআনে উল্লিখিত বিভিন্ন নবী, সাহাবী, গুণাবলী, এবং ঐশী বৈশিষ্ট্য থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি নামের পাশে এর অর্থ এবং কুরআনের সূরা বা আয়াতের রেফারেন্স (যেখানে সম্ভব) দেওয়া হলো।
- আদম – প্রথম মানুষ, নবী (সূরা আল-ইমরান ৩:৩৩)।
অর্থ: মানুষ, মাটির সৃষ্ট। - ইব্রাহিম – নবী ইব্রাহিম (আ.), খলিলুল্লাহ (সূরা ইব্রাহিম ১৪:১)।
অর্থ: জনগণের পিতা। - ইসমাঈল – নবী ইসমাঈল (আ.) (সূরা মারিয়াম ১৯:৫৪)।
অর্থ: ঈশ্বর শুনেন। - ইসহাক – নবী ইসহাক (আ.) (সূরা হুদ ১১:৭১)।
অর্থ: হাসি, আনন্দ। - ইউসুফ – নবী ইউসুফ (আ.), সৌন্দর্যের প্রতীক (সূরা ইউসুফ ১২:৪)।
অর্থ: ঈশ্বর বৃদ্ধি করেন। - মুসা – নবী মুসা (আ.), ফেরাউনের বিরুদ্ধে লড়াইকারী (সূরা তাহা ২০:৯)।
অর্থ: পানি থেকে উদ্ধার। - হারুন – নবী হারুন (আ.), মুসার সহযোগী (সূরা মারিয়াম ১৯:৫৩)।
অর্থ: উন্নত, উচ্চ। - দাউদ – নবী দাউদ (আ.), জাবুরের অধিকারী (সূরা আন-নিসা ৪:১৬৩)।
অর্থ: প্রিয়, প্রেমিক। - সুলাইমান – নবী সুলাইমান (আ.), জ্ঞানী রাজা (সূরা সাবা ৩৪:১২)।
অর্থ: শান্তি। - ইউনুস – নবী ইউনুস (আ.), মাছের পেটের নবী (সূরা ইউনুস ১০:৯৮)।
অর্থ: ঘুঘু। - ইলিয়াস – নবী ইলিয়াস (আ.) (সূরা আস-সাফফাত ৩৭:১২৩)।
অর্থ: আমার ঈশ্বর হলেন আল্লাহ। - ইয়াহইয়া – নবী ইয়াহইয়া (আ.), জাকারিয়ার পুত্র (সূরা মারিয়াম ১৯:৭)।
অর্থ: ঈশ্বরের অনুগ্রহ। - ইসা – নবী ইসা (আ.), মসিহ (সূরা মারিয়াম ১৯:৩৪)।
অর্থ: পরিত্রাণকর্তা। - মুহাম্মদ – নবী মুহাম্মদ (সা.), সর্বশেষ নবী (সূরা মুহাম্মদ ৪৭:২)।
অর্থ: প্রশংসিত। - আহমদ – নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আরেক নাম (সূরা আস-সাফ ৬১:৬)।
অর্থ: অতি প্রশংসিত। - জাকারিয়া – নবী জাকারিয়া (আ.) (সূরা মারিয়াম ১৯:২)।
অর্থ: ঈশ্বর স্মরণ করেন। - লুকমান – জ্ঞানী ব্যক্তি, সূরা লুকমানের নামকরণ (সূরা লুকমান ৩১:১২)।
অর্থ: জ্ঞ্ন। - শুয়াইব – নবী শুয়াইব (আ.) (সূরা হুদ ১১:৮৪)।
অর্থে: সঠিক পথে পরিচালিত। - আইয়ূব – নবী আইয়ূব (আ.) (সূরা আন-নিসা ৪:১৬৩)।
অর্থ: ধৈর্যশীল। - তালুত – রাজা, বনী ইসরাঈলের নেতা (সূরা আল-বাকারা ২:২৪৭)।
অর্থ: উঁচু, মহান।
কুরআনের গুণবাচক নাম (আসমা উল হুসনা থেকে)
আল্লাহর ৯৯ নামের মধ্যে কিছু নাম মানুষের জন্যও ব্যবহৃত হয়, তবে সামনে ‘আব্দ’ (বান্দা) যোগ করে।
21. আব্দুল্লাহ – আল্লাহর বান্দ (সূরা আল-ফুরকান ২৫:২)।
22. আব্দুর রহমান – দয়াময়ের বান্দা (সূরা আর-রাহমান ৫৫:১)।
23. আব্দুর রহিম – করুণাময়ের বান্দা।
24. আব্দুল মালিক – মালিকের বান্দা।
25. আব্দুল কাদির – ক্ষমতাবানের বান্দা।
26. আনস – সাহায্যকারী (সূরা আল-ইমরান ৩:৫২)।
অর্থ: বন্ধু।
27. আতিক – মুক্ত (সূরা আশ-শারহ ৯৪:১)।
অর্থ: উদার।
28. আমান – নিরাপত্তা (সূরা আন-নিসা ৪:৮৩)।
অর্থ: শান্তি, নির্ভয়।
29. আজিজ – প্রিয়, সম্মানিত (সূরা ইউসুফ ১২:৩০)।
30. বশির – সুসংবাদদাতা (সূরা হুদ ১১:২)।
31. ফারুক – সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী (সূরা আল-আনফাল ৮:৪১)।
32. হামিদ – প্রশংসাকারী (সূরা লুকমান ৩১:১২)।
33. হাসান – সুন্দর (সূরা আল-কাহাফ ১৮:৭)।
34. হুসাইন – অতি সুন্দর।
35. ইকরাম – সম্মান (সূরা আর-রাহমান ৫৫:২৭)।
36. ইমরান – উন্নতি (সূরা আল-ইমরান ৩:১)।
37. ইমাম – নেতা (সূরা আল-বাকারা ২:১২৪)।
38. জাবির – সান্ত্বনাদায়ক।
39. জুবাইর – শক্তিশালী।
40. কামিল – পূর্ণ, নিখুঁত (সূরা আল-বাকারা ২:১৯৬)।
আরও নাম
- খালিদ – চিরস্থায়ী।
- মাহদি – পথপ্রদর্শিত।
- মাকসুদ – উদ্দেশ্য (সূরা হুদ ১১:১)।
- মুনির – আলোকিত (সূরা আল-ইমরান ৩:১৮৪)।
- নাসির – সাহায্যকারী (সূরা আত-তাফ ৯:১১৬)।
- রফিক – সঙ্গী (সূরা আন-নিসা ৪:৬৯)।
- রাশিদ – সঠিক পথে চলা।
- সাবির – ধৈর্যশীল (সূরা আল-বাকারা ২:১৫৩)।
- সাদিক – সত্যবাদী (সূরা মারিয়াম ১৯:৫৪)।
- তাহির – পবিত্র (সূরা আল-বাকারা ২:২২২)।
- উমার – দীর্ঘায়ু।
- উসমান – সাহাবী, সূক্ষ্ম।
- ওয়াসিম – সুদর্শন।
- ইয়াসিন – সূরা ইয়াসিনের নাম (সূরা ইয়াসিন ৩৬:১)।
- জায়েদ – বৃদ্ধি।
অতিরিক্ত নাম
- আব্দুল আলী – জ্ঞানীনের বান্দা।
- আব্দুল বাসিত – প্রসারকারীর বান্দা।
- আব্দুল ফাত্তাহ – বিজয়দানকারীর বান্দা।
- আব্দুল হক – সত্যের বান্দা।
- আব্দুল জলিল – মহিমাময়ের বান্দা।
- আদিল – ন্যায়বিচারক।
- আফনান – শাখা (সূরা আর-রাহমান ৫:৪৮)।
- আহনাফ – সৎ।
- আলম – জ্ঞানী।
- আমিন – বিশ্বস্ত (সূরা আশ-শারহ ৯৪:৪)।
- আনিস – বন্ধু।
- আরিফ – জ্ঞানবান।
- আশাইম – সাহসী।
- আসিম – রক্ষাকারী।
- আতিফ – দয়ালু।
- আওয়াইস – উপহার।
- আজ্জম – মহান।
- বাকির – উজ্জ্বল।
- বিলাল – সাহাবী, প্রথম মুয়াজ্জিন।
- দানিশ – জ্ঞান।
- ফাহিম – বুদ্ধিমান।
- ফাইজ – বিজয়ী।
- ফারিস – অশ্বারোহী।
- গাফির – ক্ষমাকারী।
- হাফিজ – সংরক্ষক।
- হামজা – সিংহ।
- হারিস – রক্ষণকারী।
- ইব্রাহিম খলিল – আল্লাহর বন্ধু।
- ইদ্রিস – নবী ইদ্রিস (আ.) (সূরা মারিয়াম ১৯:৫৬)।
- ইফতিখার – গৌরব।
- ইমতিয়াজ – সম্মান।
- ইনাম – পুরস্কার।
- ইশরাক – আলো।
- জাহিদ – সন্ন্যাসী।
- জামাল – সৌন্দর্য।
- জাওয়াদ – উদার।
- কাদির – শক্তিশালী।
- কাইয়ুম – চিরস্থায়ী।
- কাশিফ – আবিষ্কারক।
- লতিফ – সূক্ষ্ম।
- মাহির – দক্ষ।
- মাজিদ – গৌরবময়।
- মুহসিন – উত্তম আচরণকারী।
- মুস্তাফা – নির্বাচিত (নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উপাধি)।
- নাদিম – বন্ধু।
- নাঈম – সুখী (সূরা আল-ইনফিতার ৮২:১৩)।
- নূর – আলো (সূরা নূর ২৪:৩৫)।
- কুদ্দুস – পবিত্র।
- রহমত – দয়া (সূরা আর-রাহমান্মান)।
- রিয়াদ – বাগান (সূরা আশ-শারহ)।
- সাফি – বিশুদ্ধ।
- সালাম – শান্তি (সূরা আল হাশর)।
- শাহিদ – সাক্ষী (সূরা আল আহযাব)।
- তৌফিক – সাফল্য।
- ওয়াহিদ – একক (সূরা আল বাকারা)।
নাম রাখার কিছু পরামর্শ
- অর্থ জানুন: নামের অর্থ সুন্দর ও ইতিবাচক হওয়া উচিত।
- কুরআন ও হাদিসের অনুসরণ: কুরআন এবং হাদিসে উল্লিখিত নামগুলো প্রাধান্য দিন।
- সহজ উচ্চারণ: নামটি সহজে উচ্চারণযোগ্য হওয়া উচিত।
- পিতার নামের সাথে মিল: নামটি পিতার নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে ভালো।
এই নামগুলো পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সূরা এবং আয়াত থেকে সংগৃহীত। বিস্তারিত জানতে Quran.com ভিজিট করুন। এই ওয়েবসাইটে কুরআনের আরবি, বাংলা, এবং ইংরেজি অনুবাদ ও তাফসির পাওয়া যায়।