২০২৫ সালের এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতের কাছে মাত্র ৫৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কোচ লালচাঁদ রাজপুত স্বীকার করেছেন যে, তার দল ভারতের তারকা ক্রিকেটারদের নাম ও গুণমানের কাছে অভিভূত হয়ে পড়েছিল। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ভারত মাত্র ৪.৩ ওভারে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয়, যা তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের দ্রুততম জয়।
ম্যাচের হাইলাইটস
ইউএই-এর ব্যাটসম্যানরা ভারতের উচ্চ-গুণমানের বোলিং আক্রমণের সামনে একেবারেই টিকতে পারেনি। ভারতীয় বোলাররা, বিশেষ করে কুলদীপ যাদবের নেতৃত্বে, দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে ইউএই-কে ১৩.১ ওভারে মাত্র ৫৭ রানে অলআউট করে দেয়। কুলদীপ যাদব ৪/৭ রানে চার উইকেট শিকার করে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হন। তার পাশাপাশি শিবম দুবে ২ ওভারে ৩/৪ রানে দুর্দান্ত বোলিং করে ইউএই-এর লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের গুটিয়ে দেন।
জসপ্রীত বুমরাহ (১/১৯) এবং বরুণ চক্রবর্তী (১/৪) পাওয়ারপ্লে-তে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে ইউএই-এর শুরুটা নষ্ট করে দেন। অক্ষর প্যাটেল (১/১৩) এবং হার্দিক পান্ডিয়াও তাদের ভূমিকা পালন করেন। ইউএই-এর মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান—আলিশান শারাফু (১৭ বলে ২২) এবং অধিনায়ক মুহাম্মদ ওয়াসিম (২২ বলে ১৯)—দুই অঙ্কের রানে পৌঁছাতে পারেন। ইউএই-এর ব্যাটসম্যানরা ৮১টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৫২টিতে রান করতে ব্যর্থ হয়।
ভারত তাদের রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৪.৩ ওভারে ৬০/১ স্কোরে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। অভিষেক শর্মা ১৬ বলে ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন, আর শুভমান গিল অপরাজিত ২০ (৯ বল) এবং অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব অপরাজিত ৭ রান করে দলকে জয় এনে দেন।
লালচাঁদ রাজপুতের মন্তব্য
ইউএই-এর কোচ এবং প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার লালচাঁদ রাজপুত ম্যাচের পর বলেন, “আমাদের ব্যাটসম্যানরা এর আগে এমন মানের বোলারদের মুখোমুখি হয়নি। ভারতের বড় নামগুলোর কাছে তারা অভিভূত হয়ে পড়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “পাওয়ারপ্লে পর্যন্ত আমরা ভালো শুরু করেছিলাম, কিন্তু স্পিনাররা বল হাতে নেওয়ার পর খেলা পুরোপুরি বদলে যায়। কুলদীপ এবং বরুণের মতো বোলারদের বিরুদ্ধে শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানরাও সংগ্রাম করে। এমনকি অর্শদীপ সিংয়ের মতো বোলার যদি প্রথম একাদশে জায়গা না পান, তাহলে এটাই ভারতীয় দলের গভীরতা বোঝায়।”
রাজপুত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের প্রশংসা করে বলেন, “বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা দলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য এই ম্যাচ একটি বড় শিক্ষা।”
সূর্যকুমার যাদবের প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব দলের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে বলেন, “আমরা মাঠে ভালো মনোভাব এবং শক্তি চেয়েছিলাম, এবং ছেলেরা ঠিক তাই দিয়েছে। উইকেট কেমন খেলছে তা দেখতে চেয়েছিলাম। এটি দ্বিতীয় ইনিংসেও একই রকম ছিল।” তিনি কুলদীপের প্রশংসা করে বলেন, “দুবাইয়ের উইকেট কিছুটা ধীরগতির ছিল, এবং স্পিনাররা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কুলদীপ দুর্দান্ত বোলিং করেছে, এবং হার্দিক, দুবে এবং বুমরাহ তাকে ভালো সমর্থন দিয়েছে।”
সূর্যকুমার তরুণ ওপেনার অভিষেক শর্মারও প্রশংসা করেন, যিনি দ্রুত ৩০ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “অভিষেক মাঠে দুর্দান্ত শক্তি নিয়ে আসে। তার এই ইনিংস আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
ভারতের কৌশল
ভারত এই ম্যাচে স্পিন-ভারী আক্রমণ নিয়ে নামে, শুধুমাত্র জসপ্রীত বুমরাহকে একমাত্র বিশেষজ্ঞ পেসার হিসেবে খেলানো হয়। অর্শদীপ সিংকে প্রথম একাদশে না রাখার সিদ্ধান্ত ভারতীয় দলের গভীরতা এবং নমনীয়তা প্রকাশ করে। কুলদীপ, বরুণ এবং অক্ষরের স্পিন আক্রমণ ইউএই-এর ব্যাটসম্যানদের জন্য অত্যন্ত কঠিন প্রমাণিত হয়। শিবম দুবের বোলিংও ভারতের জন্য অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করে, যিনি তার ক্যারিয়ারের সেরা টি-টোয়েন্টি বোলিং ফিগার (৩/৪) অর্জন করেন।
ইউএই-এর চ্যালেঞ্জ
ইউএই-এর জন্য এই ম্যাচটি ছিল একটি কঠিন পরীক্ষা। তারা সম্প্রতি বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস অর্জন করলেও, ভারতের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে তাদের অভিজ্ঞতার অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লালচাঁদ রাজপুত উল্লেখ করেন, “আমাদের খেলোয়াড়দের এই ধরনের ম্যাচ থেকে শিখতে হবে। ভারতের বোলারদের মোকাবিলা করা তাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা।”
এশিয়া কাপে ভারতের অবস্থান
এই জয়ের মাধ্যমে ভারত তাদের এশিয়া কাপ ২০২৫ অভিযান শুরু করেছে দুর্দান্তভাবে। ভারত গ্রুপ এ-তে পাকিস্তান, ওমান এবং ইউএই-এর সাথে রয়েছে। তাদের পরবর্তী ম্যাচ ১৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওমানের বিপক্ষে। ভারত ইতিমধ্যে রেকর্ড আটবার এশিয়া কাপ জিতেছে এবং এই টুর্নামেন্টে তারা ফেভারিট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
ইউএই-এর বিপক্ষে ভারতের এই প্রভাবশালী জয় তাদের শক্তি এবং গভীরতা প্রদর্শন করেছে। কুলদীপ যাদব এবং শিবম দুবের বোলিং, অভিষেক শর্মা এবং শুভমান গিলের ব্যাটিং দলের ভারসাম্য প্রমাণ করে। ইউএই-এর কোচ লালচাঁদ রাজপুতের মতে, তাদের দলের জন্য এই পরাজয় একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা, যা তাদের ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোর জন্য প্রস্তুত করবে। ভারত এখন পাকিস্তানের বিপক্ষে উচ্চ-ভোল্টেজ ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা এশিয়া কাপের অন্যতম আকর্ষণীয় লড়াই হতে চলেছে।