ভারতের শেয়ার বাজারের অন্যতম প্রধান সূচক Nifty 50 আজ সামান্য নিম্নমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে। এই সূচকটি গত কয়েকদিন ধরে ওঠানামার মধ্যে রয়েছে এবং জুলাই মাসে ২০১৯ সালের পর এটি সবচেয়ে দুর্বল পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে। আজকের বাজারের পতনের পেছনে বেশ কিছু কারণ কার্যকর হয়েছে, যা নিম্নরূপে আলোচনা করা হলো:
১. আইটি সেক্টরের দুর্বল পারফরম্যান্স
আইটি সেক্টরের শেয়ারগুলো এই বছর উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। বিশেষ করে, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) এবং অন্যান্য আইটি কোম্পানির শেয়ার ২৫% পর্যন্ত কমেছে। এই সেক্টরের দুর্বল আয়ের রিপোর্ট এবং বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে চলমান চ্যালেঞ্জ বাজারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
২. ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বিলম্ব বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানির উপর ২০-২৫% শুল্ক আরোপের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে, যদি ১ আগস্টের মধ্যে কোনো চুক্তি চূড়ান্ত না হয়। এই অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা বাড়িয়েছে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতি ঘোষণার অপেক্ষা
বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের আসন্ন নীতি ঘোষণার দিকে তাকিয়ে আছেন। ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েলের মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কিত মন্তব্য বৈশ্বিক বাজারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা ভারতীয় বাজারকেও প্রভাবিত করছে। এই অপেক্ষার কারণে বাজারে সতর্কতা বিরাজ করছে।
৪. দুর্বল বৈশ্বিক সংকেত
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস, বাজারের মনোভাবকে প্রভাবিত করছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ২০২৫ সালে ১.৯% এবং চীন ৪.৮% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তবুও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা সতর্ক রয়েছেন, যা ভারতীয় বাজারে প্রভাব ফেলছে।
৫. সেক্টর-নির্দিষ্ট চাপ
আইটি ছাড়াও, রিটেল সেক্টরের শেয়ার যেমন ট্রেন্ট, বছরের শুরু থেকে প্রায় ৩০% কমেছে। এছাড়া, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক এবং টাইটানের মতো কোম্পানির শেয়ারও সূচকের উপর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো (এলঅ্যান্ডটি) এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের শক্তিশালী পারফরম্যান্স সূচককে কিছুটা সমর্থন দিয়েছে।
বাজারের বর্তমান অবস্থা
আজ, ৩১ জুলাই ২০২৫, Nifty 50 সূচক ০.০৮% বেড়ে ২৪,৮৪০.৪ পয়েন্টে এবং সেনসেক্স ০.০৪% বেড়ে ৮১,৩৭১.৭ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে। তবে, জুলাই মাসে সামগ্রিকভাবে সূচকটি চার মাসের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ভেঙে দুর্বল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। GIFT Nifty ফিউচার ০.২% উত্থানের ইঙ্গিত দিয়েছে, তবে বাজারের মনোভাব সতর্ক রয়েছে।
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে বাজারের দিকনির্দেশনা নির্ভর করবে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সিদ্ধান্ত এবং আসন্ন ত্রৈমাসিক আয়ের রিপোর্টের উপর। টাটা স্টিল, পাওয়ার গ্রিড এবং হুন্ডাই অ্যাভিয়েশনের মতো কোম্পানির প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফল সেক্টর-নির্দিষ্ট গতিবিধি সৃষ্টি করতে পারে।
উপসংহার
Nifty 50-এর আজকের পতনের পেছনে আইটি সেক্টরের দুর্বলতা, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা, এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকেত প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সাথে বাজার পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং আসন্ন বড় ঘোষণাগুলোর দিকে নজর রাখা উচিত।
দাবিত্যাগ: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকে। বিনিয়োগের আগে সম্পর্কিত নথিপত্র সাবধানে পড়ুন।নোট: এই নিবন্ধটি সাধারণ তথ্য প্রদানের জন্য। বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিন।