লস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহার অবৈধ, বিচারকের রায়

লস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহার অবৈধ, বিচারকের রায়

লস অ্যাঞ্জেলেস, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড সৈন্য মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন একজন ফেডারেল বিচারক। বিচারক জে. ব্রায়ারের রায়ে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ পসি কমিটাটাস আইন লঙ্ঘন করেছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। এই রায় ট্রাম্পের অন্যান্য শহরে ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহারের পরিকল্পনার জন্যও আইনি চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়।

ট্রাম্প গত জুন মাসে লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছিলেন। হোয়াইট হাউস দাবি করেছিল যে, হিংসা দমনে এই পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। তবে, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবং রাজ্যের কর্মকর্তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম ছিল এবং সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন ছিল না। নিউসম এই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে মামলা দায়ের করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক ব্রায়ার এই রায় দেন।

বিচারক ব্রায়ার তার রায়ে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশ এবং ন্যাশনাল গার্ড সংক্রান্ত বক্তব্য গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করে যে তিনি পসি কমিটাটাস আইন লঙ্ঘন করতে পারেন।” তিনি আরও সতর্ক করেন যে, ট্রাম্প এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ “প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে একটি জাতীয় পুলিশ বাহিনী গঠনের ঝুঁকি তৈরি করছেন।” রায়ে ন্যাশনাল গার্ডকে গ্রেপ্তার, অনুসন্ধান, জব্দ, নিরাপত্তা টহল, ভিড় নিয়ন্ত্রণ, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ, প্রমাণ সংগ্রহ, জিজ্ঞাসাবাদ বা তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এই রায় শুধুমাত্র ক্যালিফোর্নিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবে এটি ট্রাম্পের অন্যান্য শহরে, যেমন শিকাগো বা ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের পরিকল্পনার জন্য আইনি বাধার ইঙ্গিত দেয়। ট্রাম্প প্রশাসনের মুখপাত্র মিসেস কেলি বলেন, “প্রেসিডেন্ট আইন মান্য নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং এই রায় এই বিষয়ে চূড়ান্ত কথা হবে না।” তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নিউসম এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আদালত গণতন্ত্র এবং সংবিধানের পক্ষে রায় দিয়েছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, ট্রাম্প তার কর্তৃত্ব লঙ্ঘন করে ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। এই বিষয়ে আরেকটি মামলায় বিচারক ব্রায়ার নিউসমের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন, যদিও নবম সার্কিট কোর্ট অফ আপিলস জুন মাসে ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেয়।

এই রায় ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি অন্যান্য রাজ্য এবং শহরগুলোর জন্যও একটি নজির স্থাপন করতে পারে, যারা ট্রাম্পের সামরিক বাহিনী ব্যবহারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে চায়। এদিকে, এই ঘটনা মার্কিন রাজনীতিতে আরও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা ইতিমধ্যে জানুয়ারি ৬-এর ক্যাপিটল হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নতুন মামলার মাধ্যমে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

এই রায়ের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারে, যা এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। বিশ্বব্যাপী এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিশীলতার উপর আলোকপাত করছে, এবং এটি আগামী দিনে আরও আলোচনার জন্ম দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Source: 1

Ismail: