নেপালের জেনারেশন জি (Nepal Gen Z), যারা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলছে। এই তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে বেড়ে উঠেছে, এবং তাদের চিন্তাভাবনা ও কাজের ধরন ঐতিহ্যবাহী নেপালি সমাজের সাথে আধুনিকতার এক অনন্য মিশ্রণ সৃষ্টি করছে। নিচে নেপালের জেন জি-এর বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
জেন জি-এর বৈশিষ্ট্য
নেপালের জেন জি তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, সামাজিক সচেতনতা এবং ডিজিটাল দক্ষতার জন্য পরিচিত। তারা স্মার্টফোন, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বেড়ে উঠেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম তাদের জন্য শুধুমাত্র বিনোদনই নয়, বরং নিজেদের মতামত প্রকাশ এবং সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
- প্রযুক্তির সাথে সংযোগ: নেপালের শহরাঞ্চল, বিশেষ করে কাঠমান্ডু, পোখারা এবং বিরাটনগরের তরুণরা প্রযুক্তির সাথে অত্যন্ত সংযুক্ত। তারা ই-কমার্স, অনলাইন শিক্ষা এবং ডিজিটাল কনটেন্ট সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বাড়াচ্ছে।
- সামাজিক সচেতনতা: জেন জি পরিবেশ, লিঙ্গ সমতা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো বিষয়ে সোচ্চার। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং নারী অধিকারের পক্ষে কথা বলছে।
- উদ্যোক্তা মনোভাব: অনেক জেন জি তরুণ নিজেদের স্টার্টআপ শুরু করছে। ফুড ডেলিভারি, ফ্যাশন, টেক স্টার্টআপ এবং কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মতো ক্ষেত্রে তারা উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে আসছে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
নেপালের জেন জি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কিছুটা হতাশ হলেও সামাজিক মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করছে এবং সংস্কারের দাবি তুলছে।
- প্রতিবাদ ও আন্দোলন: জেন জি তরুণরা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে কাঠমান্ডুতে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নীতির বিরুদ্ধে তরুণরা বিক্ষোভ করেছিল। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ফ্রাইডেস ফর ফিউচারের মতো আন্দোলনে নেপালের জেন জি সক্রিয় অংশ নিয়েছে।
- নতুন রাজনৈতিক শক্তি: কিছু তরুণ নেতা, যেমন রবি লামিছানের মতো, জেন জি-এর সমর্থন পেয়ে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং স্বচ্ছ শাসনের পক্ষে কথা বলছে।
চ্যালেঞ্জসমূহ
নেপালের জেন জি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি:
- বেকারত্ব: নেপালে তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ সীমিত। অনেকে বিদেশে কাজের জন্য পাড়ি জমাচ্ছে, যা দেশে মেধা পলায়নের কারণ হচ্ছে।
- শিক্ষার গুণগত মান: গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষার মান এখনও অনেক পিছিয়ে, যা জেন জি-এর সম্ভাবনাকে সীমিত করছে।
- ডিজিটাল বিভাজন: শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির প্রবেশাধিকার কম, যা জেন জি-এর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে।
জেন জি-এর ভবিষ্যৎ
নেপালের জেন জি তাদের উদ্যম, সৃজনশীলতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে। তবে, তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে সরকার এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শিক্ষার উন্নতি, চাকরির সুযোগ সৃষ্টি এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নয়ন এই প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
নেপালের জেন জি শুধুমাত্র একটি প্রজন্ম নয়, বরং একটি শক্তি যারা দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে প্রস্তুত। তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সামাজিক সচেতনতা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নেপালকে একটি নতুন দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে, তাদের পথে বাধাগুলো দূর করতে সবার সমর্থন প্রয়োজন।