সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার মূল্য দুই দিনে ৩৭% লাফাল: ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির গুঞ্জন কি এর পিছনে?

সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার মূল্য দুই দিনে ৩৭ লাফাল

পশ্চিমবঙ্গের শেয়ার বাজারে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো খবর! হায়দ্রাবাদ-ভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার মূল্য মাত্র দুই দিনে ৩৭ শতাংশ উর্ধ্বমুখী হয়েছে। গতকালের ২০ শতাংশ লাভের পর আজ (শুক্রবার) ইন্ট্রা-ডে ট্রেডিংয়ে শেয়ারটি আরও ১৪ শতাংশ চড়েছে। এই উত্থানের পিছনে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তির ইতিবাচক গুঞ্জন এবং কোম্পানির আসন্ন ডিভিডেন্ড ঘোষণা মূল কারণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। পশ্চিমবঙ্গের ফার্মা সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত বিনিয়োগকারীরা এই খবরে সতর্ক হয়ে উঠেছেন, কারণ এটি স্থানীয় অর্থনীতির উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

কী ঘটেছে শেয়ার মার্কেটে?

সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার মূল্য গত সপ্তাহে ৩১.৪৭ টাকায় ঘুরছিল, কিন্তু গত দুই সেশনে এটি ৩৭ শতাংশ বেড়ে ৪৩ টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। এই লাফানোর ফলে কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিএসই-এল ও এনএসই-তে ট্রেড হওয়া এই স্মলক্যাপ স্টকটি ফার্মা সেক্টরের অন্যান্য শেয়ারের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে কলকাতা ও সিলিগুড়ির ট্রেডাররা, এই স্টকটিকে লক্ষ্য করে রাখছেন, কারণ এটি ভারতীয় ফার্মা রপ্তানির সঙ্গে জড়িত।

বিশ্লেষক অবিনাশ গোরাক্ষকর, একজন এসইবিআই-রেজিস্টার্ড ফান্ডামেন্টাল ইকুইটি অ্যানালিস্ট, বলেছেন, “এই র‍্যালি সম্পূর্ণ স্পেকুলেটিভ। ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তির ইতিবাচক বক্তব্য থেকে এটি উদ্ভূত হয়েছে, কিন্তু এখনও কোনো কংক্রিট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবুও, ফার্মা সেক্টরের জন্য এটি ইতিবাচক সংকেত।” তিনি যোগ করেছেন যে, স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে, কারণ মার্কেটের অস্থিরতা যেকোনো সময় বাড়তে পারে।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির গুঞ্জন: কী ঘটছে?

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় আমদানির উপর ২৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করেছিল, যা পরে ৫০ শতাংশে দ্বিগুণ হয়েছে। এর কারণ ছিল ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার অব্যাহতি। সৌভাগ্যবশত, ফার্মাসিউটিক্যালস এখনও এই ট্রেড ব্যারিয়ার থেকে মুক্ত। সাম্প্রতিক মিটিংয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন থেকে ইতিবাচক স্টেটমেন্ট এসেছে, যা বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছেন যে, এই চুক্তি ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্বকে পূর্ণ সক্ষমতায় নিয়ে যাবে।

এই গুঞ্জন ফার্মা কোম্পানিগুলোর জন্য বিশেষভাবে উপকারী, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ফার্মা রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার। সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের মতো কোম্পানি, যারা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে, তারা এতে সুবিধা পাবে। পশ্চিমবঙ্গের ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা এই খবরকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন, কারণ এটি স্থানীয় চেইন সাপ্লাইকে শক্তিশালী করতে পারে।

সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ কী? কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ভারতীয় কোম্পানি, যার হেডকোয়ার্টার হায়দ্রাবাদে। এটি প্রধানত মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ (এমসিসি) উৎপাদন করে, যা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক্সিপিয়েন্ট। কোম্পানির পণ্যগুলোতে এক্সসিপ্যাক্ট জিএমপি, এসজিএমপি, হ্যাসিপি এবং ইডিকিউএম সিইপি সার্টিফিকেশন রয়েছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম এমসিসি প্রস্তুতকারকদের একটি এবং ফার্মা, নিউট্রাসিউটিক্যাল ও ফুড ইংগ্রেডিয়েন্টসে নেতৃত্ব দেয়।

কোম্পানির তিনটি মাল্টি-লোকেশন ফ্যাসিলিটি রয়েছে গুজরাত ও তেলেঙ্গানায়। গত জুন ২০২৫-এ কোম্পানির নেট সেলস ৩৩.৯৯ শতাংশ বেড়ে ১২৮.২৫ কোটি টাকা হয়েছে। তবে, অতীতে একটি ফায়ার ঘটনা (পশম্যলরাম প্ল্যান্টে) কোম্পানিকে প্রভাবিত করেছে, কিন্তু তারা এখন ডাহেজ এসইজেড-এ ১২,০০০ এমটিপিএ ক্যাপাসিটি এক্সপ্যানশন শুরু করেছে, যা ৯ মাসের মধ্যে চালু হবে। এই প্রকল্পটি কোম্পানির গ্লোবাল লিডারশিপকে শক্তিশালী করবে।

প্রমোটারদের হোল্ডিং ৪৪.১ শতাংশ, কিন্তু ৪৫.৪ শতাংশ শেয়ার প্লেজড রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সতর্কতার সংকেত। পশ্চিমবঙ্গের বিনিয়োগকারীরা এই ফ্যাক্টরগুলো মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ডিভিডেন্ড ঘোষণা: আরেকটি ট্রিগার

কোম্পানি ৪ সেপ্টেম্বর একটি এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে ঘোষণা করেছে যে, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রেকর্ড ডেট হিসেবে ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে। এটি আর্থিক বছর ২০২৪-২৫-এর জন্য। এই ঘোষণা শেয়ারের উত্থানকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। বুক ক্লোজার ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিনিয়োগকারীদের জন্য কী অর্থ?

পশ্চিমবঙ্গের ফার্মা সেক্টর দিনাজপুর থেকে দক্ষিণবঙ্গের শিল্পাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। সিগাচি-এর মতো কোম্পানির উত্থান ভারতীয় ফার্মা রপ্তানিকে উৎসাহিত করবে, যা স্থানীয় চেইন সাপ্লাই এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে। তবে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন যে, এই র‍্যালি স্পেকুলেটিভ, এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বা ট্রেড পলিসি পরিবর্তন এটিকে প্রভাবিত করতে পারে। কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডাররা এখন এই স্টকটিকে ওয়াচলিস্টে রাখুন, কিন্তু ঝুঁকি বিবেচনা করে বিনিয়োগ করুন।

যদি আপনি পশ্চিমবঙ্গের কোনো বিনিয়োগকারী হন, তাহলে সিগাচির এই উত্থানকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখুন, কিন্তু মার্কেটের অস্থিরতা মাথায় রাখুন। আরও আপডেটের জন্য আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।

Ismail: