বসিরহাট, পশ্চিমবঙ্গের একটি জনপ্রিয় শহর যা দুর্গা পূজার সময়ে সাংস্কৃতিক উৎসবের জন্য বিখ্যাত, এবার আবারও তার প্রসিদ্ধ ঘোষবাড়ির প্যান্ডেল নিয়ে সকলে উচ্ছ্বসিত। এই বছরের দুর্গা পূজায় (২০২৫) ঘোষবাড়িতে বানানো হচ্ছে বসিরহাটের সেরা প্যান্ডেল, যা তার অনন্য গঠন এবং ঐতিহ্যবাহী আভা দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করবে। প্যান্ডেলটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে, যেখানে কাঠের কারুকাজ, রঙিন আলোকসজ্জা এবং প্রাকৃতিক উপাদানের মিশ্রণে একটি মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। প্রধান প্রবেশদ্বারে লক্ষ্মীপুরের অনুপ্রেরণায় তৈরি অ্যার্চ, মূল মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমার জন্য আটচালা-স্টাইলের ছাদ এবং চারপাশে ফুল-পাতার ডেকোরেশন—এসবের মাধ্যমে প্যান্ডেলটি দেখতে হবে যেন একটি প্রাচীন বনেদি বাড়ির থাকুরঘর। স্থানীয় শিল্পীদের তত্ত্বাবধানে এই গঠনটি তৈরি হচ্ছে, যাতে বসিরহাটের স্থানীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া লাগে। পূজা সময়ে এখানে ধুনুচি নাচ, ঢাকের তাল এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, যা দর্শকদের পূজার আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।ঘোষবাড়ির কিছু বিবরণ: একটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এলাকাঘোষবাড়ি বসিরহাটের একটি প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ অঞ্চল, যা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের জন্য পরিচিত। এখানকার ঘোষ পরিবারের বাড়িটি শতাব্দী প্রাচীন, যা বাঙালি জমিদারি যুগের স্মৃতি বহন করে। প্যান্ডেলটি এই বাড়ির বিশাল উঠোনে স্থাপিত হবে, যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত এসে দর্শন করেন। ঘোষবাড়ির বিশেষত্ব হলো এর সামাজিক দায়িত্ববোধ—এখানে সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য সুবিধা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ:




- গরিবদের জন্য বাজার: ঘোষবাড়ির কাছে একটি সাপ্তাহিক বাজার আয়োজিত হয়, যেখানে গরিব এবং নিম্নআয়ের পরিবারগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য, পোশাক এবং দৈনন্দিন জিনিসপত্র কিনতে পারেন। পূজার সময় এই বাজারে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়, যাতে সকলে উৎসব উপভোগ করতে পারেন।
- টুরিস্টদের জন্য ব্যবস্থা: পর্যটকদের জন্য ঘোষবাড়িতে বিশেষ গাইডেড ট্যুরের আয়োজন করা হয়। এখানে থাকার জন্য অতিথিগৃহ, স্থানীয় খাবারের স্টল এবং পরিবহনের সুবিধা রয়েছে। পূজার দিনগুলোতে টুরিস্টদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ চলবে, যাতে প্যান্ডেল পরিদর্শনের সাথে স্থানীয় সংস্কৃতির পরিচয় দেওয়া হবে।
- নতুন পিরামিডের নির্মাণ: ঘোষবাড়ির কাছে একটি নতুন আকর্ষণ হিসেবে পিরামিড-আকৃতির একটি কাঠামো বানানো হচ্ছে, যা পূজার থিমের সাথে যুক্ত। এটি মিশরীয় পিরামিডের অনুপ্রেরণায় তৈরি, কিন্তু বাঙালি শিল্পের ছোঁয়া দিয়ে। এর উদ্দেশ্য হলো পর্যটকদের একটি অনন্য অভিজ্ঞতা দেওয়া, এবং এখানে সবচেয়ে কম দামে ঘুরে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। এই পিরামিডের ভিতরে ছোটখাটো প্রদর্শনী এবং আলোকিত শো চলবে, যা পূজার রাতগুলোকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করে তুলবে।
ঘোষবাড়ি শুধু পূজার জায়গা নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ কমিউনিটি হাব যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে। এখানকার পরিবেশ এতটাই শান্তিপূর্ণ যে, পরিবার নিয়ে এসে একদিন কাটানো যায়।কীভাবে যাবেন: সহজ পথনির্দেশবসিরহাটের ঘোষবাড়িতে পৌঁছানো খুবই সহজ। মধ্যমপুর রেল স্টেশনে নেমে মাত্র ২ মিনিটের রাস্তা পথে হেঁটে বা অটো নিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায়। বসিরহাট থেকে যদি আসেন, তাহলে স্থানীয় বাস বা ট্যাক্সিতে ১০-১৫ মিনিটের পথ। কলকাতা থেকে আসলে হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে বসিরহাট পৌঁছে তারপর অটো। পূজার সময় রাস্তাগুলো আলোকিত এবং ভালোভাবে চিহ্নিত থাকবে, তাই কোনো সমস্যা হবে না। সকলে এসে ঘুরে দেখুন, ঘোষবাড়ির এই প্যান্ডেল এবছরের সেরা অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে!দুর্গা পূজার এই উৎসবে ঘোষবাড়ির প্যান্ডেলটি বসিরহাটের গৌরব বাড়িয়ে তুলবে। শুভ নবরাত্রি!
Photos By Sahid
Location Visit